ঢাকা , শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ১৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে ডেঙ্গু : চট্টগ্রামেই তিন হাজার রোগী শনাক্ত

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৮-১১-২০২৪ ০১:৫৭:২৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৮-১১-২০২৪ ০২:১১:০৪ অপরাহ্ন
ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে ডেঙ্গু : চট্টগ্রামেই তিন হাজার রোগী শনাক্ত ফাইল ফটো
দেশজুড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকাও। এডিস মশার বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গায়ে প্রচণ্ড জ্বর আর শরীর ব্যথা নিয়ে প্রতিদিনই চট্টগ্রাম নগরীরর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ডেঙ্গু রোগী। এতে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। চলতি বছর চট্টগ্রামে ৩ হাজার ২৪৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘চট্টগ্রামে দিন দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যে কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য চমেক হাসপাতালে পৃথক একটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭নভেম্বর) ওই ওয়ার্ডে ২২ জন রোগী ভর্তি ছিল।’

চমেক হাসপাতাল ডেঙ্গু ওয়ার্ড সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়। ৬ নভেম্বর পর্যন্ত এ ওয়ার্ডে ৬২০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৩৭০ জন পুরুষ এবং ২৫০ জন নারী। আক্রান্তদের মধ্যে চার জন পুরুষসহ পাঁচ জন রোগী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামে চলতি বছর ৩ হাজার ২৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৭৬১ জন, নারী ৮৯৮ জন এবং শিশু ৫৮৫ জন। চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ ১১ জন, নারী ১৫ এবং শিশু ৩ জন।’

চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ২৯ জনের মধ্যে নভেম্বরে ৪ জন, অক্টোবরে ৯, সেপ্টেম্বরে ১১, আগস্টে ১, জুলাইয়ে ১, মার্চে ১ এবং জানুয়ারিতে ২ জন মারা গেছেন। তিনি জানান, পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৯ জন, ২০২৩ সালে ১০৭ জন, ২০২২ সালে ৪১ জন এবং ২০২১ সালে ৫ জন।

উপজেলা পর্যায়েও ডেঙ্গু বাড়ছে। এরমধ্যে লোহাগাড়ায় ২০০ জন, সাতকানিয়ায় ১৪২ জন, সীতাকুণ্ডে ১৫১ জন, রাউজানে ১১৭ জন, পটিয়ায় ৭৮ জন, চন্দনাইশে ৭৬ জন, বাঁশখালীতে ৭৩ জন, কর্ণফুলীতে ৫৫ জন, হাটহাজারীতে ৫১ জন, বোয়ালখালীতে ৪৮ জন ও ফটিকছড়িতে ৪৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ৭টি এলাকাকে রেড জোন, ৫টি এলাকাকে হলুদ, ৭টি এলাকাকে নীল ও ৪টি এলাকাকে সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ৭টি এলাকার মধ্যে রয়েছে- কোতোয়ালি, বাকলিয়া, বায়েজিদ, বন্দর, পাহাড়তলী, খুলশী ও চকবাজার থানা এলাকা। জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাওছ বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যার ভিত্তিতে এসব এলাকাকে আমরা চিহ্নিত করেছি। এরমধ্যে ৭টি এলাকাকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৫টি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে এই তালিকা সিটি করপোরেশনকে দিয়েছি।’

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর বাড়ছে। ডেঙ্গু কমাতে হলে মশা নিধনের বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে যেসব এলাকায় বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে সে তালিকা সিটি করপোরেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে মশা নিধনে বেশি নজর দেওয়ার জন্য বলেছি।’

গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরদিন বুধবার (৬ নভেম্বর) ডেঙ্গু নিয়ে করপোরেশনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন তিনি। এতে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যাগে মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল গড়ে তোলা হবে। স্বল্প খরচে বিশেষজ্ঞসহ ডেঙ্গু রোগীদের রক্ত পরীক্ষা ও চিকিৎসা দেওয়া হবে। মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট পরিদর্শন করবো আমি।’

চসিক মেয়র আরও বলেন, ‘মশা মারতে এখন যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোও আমি যাচাই করবো, সেগুলো আসলে কাজ করছে কিনা। প্রয়োজনে মশা নিয়ন্ত্রণে নতুন ওষুধ ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করবো।’

বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ